'সেবার গাড়ি আসছে বাড়ি' কার্যক্রম: এবার মুগ্ধ করলো রামপালবাসীকে Jan 16, 2012
গ্রামের সাধারণ মানুষকে তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে সামাজিক সেবার আওতায় আনতে গ্রামীণ কমিউনিকেশনসের অন্তর্গত গ্লোবাল কমিউনিকেশন সেন্টার এবং জাপানের কিয়ুশু বিশ্ববিদ্যালয় ও গাড়ি নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান টয়োটার যৌথ উদ্যোগে পালিত হচ্ছে 'সেবার গাড়ি আসছে বাড়ি' কার্যক্রম। কার্যক্রমের প্রথম সপ্তাহে যশোরের বসুন্দিয়া গ্রামে সেবা কর্মসূচী সফলভাবে শেষ করে দ্বিতীয় সপ্তাহে সেবার গাড়ি ছুটে যায় বাগেরহাট জেলার রামপাল ইউনিয়নে। ১৪ থেকে ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত তিন দিন ব্যাপী সেবা কার্যক্রমে বিপুল সংখ্যক গ্রামবাসী স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে পরামর্শ, বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ এবং তথ্যপ্রযুক্তি ভিত্তিক নানা ধরনের সেবা গ্রহণ করেন।
গ্রাম-দিবস উপলক্ষ্যে রামপাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সংলগ্ন মাঠটি উৎসবের সাজে সেজে ওঠে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বেগম হাবিবুন নাহার (এমপি, বাগেরহাট-৩) উপস্থিত ছিলেন। অন্যান্যদের মধ্যে ছিলেন রামপাল ও পার্শ্ববর্তী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানবৃন্দ, টয়োটা কোম্পানির কর্মকর্তা ও প্রতিনিধিগণ, এবং জাপানের ইউনিভার্সিটি অফ ইলেকট্রো কমিউনিকেশনস এর দুই জন প্রফেসর। তাঁরা এই কার্যক্রমের প্রতি তাঁদের একাত্মতা প্রকাশ করে তাঁদের মূল্যবান বক্তব্য পেশ করেন। বেগম হাবিবুন নাহার (এমপি, বাগেরহাট-৩), রামপাল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, গ্লোবাল কমিউনিকেশন সেন্টারের পরিচালক ড. আশির আহমেদ এবং কনসালটেন্ট ড. কাজী রফিকুল ইসলাম মারুফ ফিতা কেটে সেবার গাড়ির কার্যক্রম উদ্বোধন করেন।
রামপালে সেবাচলাকালীন তিন দিনে ১৯৮ জন গ্রামবাসী স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান যাদের মধ্যে ১২ জন ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের পরামর্শ নেন। ৯১ জন গ্রামওয়েবে নিজ নিজ গ্রামের ওয়েবসাইটের সদস্যপদ গ্রহণ করেন। একই সঙ্গে এ কার্যক্রমের আওতায় গ্রামের ৮০ জন শিক্ষার্থীকে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, ৮০ জন উদ্যোক্তাকে ব্যবসায় বিষয়ক প্রশিক্ষণ এবং ৪০ জন কৃষককে জৈব পদ্ধতিতে চাষাবাদ সম্পর্কে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। গবেষণার অংশ হিসেবে ভবিষ্যতের জন্য দীর্ঘস্থায়ী সেবার গাড়ির নকশা তৈরির উদ্দেশ্যে সেবার গাড়ির বিভিন্ন দিক সম্পর্কে ২০০ জন গ্রামবাসীর মতামত ও পরামর্শ গ্রহণ করা হয়। সবমিলে সর্বমোট ১৪০০ জন গ্রামবাসীর সাথে মিলিত হওয়ার সুযোগ ঘটে এই উৎসবে।
বসুন্দিয়ার মত রামপালেও সবার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল ভ্রাম্যমান স্বাস্থ্য পরীক্ষাকেন্দ্র। স্বাস্থ্য পরীক্ষাকেন্দ্রের সাথে ছিল স্কয়ার হাসপাতালের ডাক্তারদের সাথে টেলিকনফারেন্স এবং একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের সাথে সরাসরি কথা বলার ব্যবস্থা।
Income Generation Project for Farmers Using ICT (IGPF) এবং JICA এর তত্ত্বাবধানে আয়োজিত ‘জৈব পদ্ধতিতে চাষাবাদ’ শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় ছিল স্থানীয় কৃষকদের সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করে সার ও কীটনাশকমুক্ত ফসল উৎপাদনের কৌশল শেখানোর ব্যবস্থা। পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যৎ উদ্যোক্তা তৈরি ও গ্রামের ব্যবসা-বাণিজ্যের পদ্ধতিকে আরও উন্নত করার লক্ষ্যে পরিচালনা করেন ব্যবসায় উদ্যোগ সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ কর্মশালা।
এছাড়াও শিশু-কিশোর ও স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় কুইজ ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা যেখানে যথাক্রমে প্রায় ১৭০ ও ১২০ জন প্রতিযোগী অংশ নেয়। এর মাধ্যমে মোট ৫০ জন প্রতিযোগীকে বিজয়ী হিসেবে পুরস্কৃত করা হয়। তরুণ প্রজন্মকে নিজ গ্রাম ও ইউনিয়ন সম্পর্কে আরও বেশি জানতে উদ্বুদ্ধ করাই ছিল এই প্রতিযোগিতার উদ্দেশ্য।
সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র জনাব তালুকদার আব্দুল খালেক এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে বেগম হাবিবুন নাহার (এমপি, বাগেরহাট-৩) উপস্থিত ছিলেন। অন্যান্যদের মধ্যে ছিলেন রামপাল ও পার্শ্ববর্তী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানবৃন্দ, টয়োটা কোম্পানির কর্মকর্তা ও প্রতিনিধিগণ, এবং জাপানের ইউনিভার্সিটি অফ ইলেকট্রো কমিউনিকেশনস এর দুই জন প্রফেসর। উপস্থিত অতিথিবৃন্দ ভবিষ্যতে এ ধরনের কার্যক্রম পুনরায় অনুষ্ঠানের আহ্বান জানিয়ে বক্তব্য রাখেন এবং বিভিন্ন প্রশিক্ষণ পর্ব ও প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার ও 'সেবার গাড়ি আসছে বাড়ি' স্লোগান সম্বলিত টি-শার্ট বিতরণ করেন। পরে তাঁরা গ্রামের শিশু-কিশোরদের অংশগ্রহণে এবং প্রায় ২,০০০ গ্রামবাসীর উপস্থিতিতে একটি মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।
গ্রামবাসীদের কাছ থেকে সরাসরি প্রতিক্রিয়া জানতে এবং প্রকল্পের সার্বিক কার্যক্রম পরিদর্শনের জন্যে টয়োটার প্রতিনিধি, জাপানের ইউনিভার্সিটি অফ ইলেকট্রো কমিউনিকেশনস এর ২ জন প্রফেসর এবং আইজিপিএফ-জাইকা এর প্রতিনিধি রামপাল পরিদর্শন করেন। গ্রামবাসীদের আতিথিয়তা এবং আন্তরিক সহযোগীতা তাদেরকে বিশেষভাবে মুগ্ধ করে।
এ কার্যক্রমের অন্যতম একটি দিক হল এর বিষয়বস্তুগুলো এমনভাবে সাজানো হয়েছে যেন সকল বয়স-শ্রেণী ও পেশার মানুষ এ থেকে কোনো না কোনো সেবা গ্রহণ করতে পারেন। বসুন্দিয়ার মত রামপালেও বয়স-পেশা-সামাজিক অবস্থান নির্বিশেষে সকল মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে এ কার্যক্রম পালিত হয়। পরবর্তী গ্রাম-উৎসব রাজশাহী বিভাগের ঠাকুরগাঁও জেলায় অনুষ্ঠিত হবে।
|