ভিন্ট কার্ফ(সার্ফ)কে বলা হয়ে থাকে ইন্টারনেটের উদ্ভাবক। কম্পিউটার বিজ্ঞানী ভিন্ট কার্ফ(সার্ফ)১৯৪৩ সালের ২৩ জুন যুক্তরাষ্ট্রের কানিক্টিকাটে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৯৯ সালের ৭ এপ্রিল, ইন্টারনেট সোসাইটির চেয়ারম্যান হিসেবে ‘স্পিচ টু কম্পিউটারস, ফ্রিডম অ্যান্ড প্রাইভেসি কনফারেন্স’-এ তিনি এই বক্তব্য দেন।
ইন্টারনেট সবার জন্য। কথাটা বলা আসলে যতটা সহজ, কিন্তু এটাকে বাস্তবে রূপ দেওয়া ঠিক ততটা সহজ নয়। সবার আগে বুঝতে হবে এই লক্ষ্যে আমরা কত দূর এগিয়েছি।
সামনের দিনগুলোতে হয়তো ইন্টারনেটের অনেক চাহিদা তৈরি হবে টেলিভিশন চ্যানেল, রেডিও, সংবাদপত্র থেকে শুরু করে সব গণমাধ্যমে। তখন তথ্য আর শুধু কিছু মানুষের হাতের নাগালে থাকবে না, সবার কাছে সব তথ্য পৌঁছে যাবে নিমেষেই। ইন্টারনেট কোনো তথ্য বা সাধারণ কোনো বার্তাকে যেভাবে সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পারে আর কোনো মাধ্যমে সেটা সম্ভব নয়। ইন্টারনেট আসলে কাজ করে মেগা ফোনের মতো, প্রয়োজনমতো সামান্য শব্দও ছড়িয়ে দিতে পারে ব্যাপক আকারে।
গণতন্ত্র চর্চাকে আরও বেশি বিকশিত করছে ইন্টারনেট। ইন্টারনেটের মাধ্যমে ভোটও দেওয়া সম্ভব এখন। সামাজিকতাকেও নতুন মাত্রা দিয়েছে ইন্টারনেট। ইন্টারনেটের মাধ্যমে মানুষ নিজের জ্ঞান ছড়িয়ে দিতে পারছে সারা বিশ্বে, গবেষণার জন্য যা খুব বেশি জরুরি। ইন্টারনেট আজ পৃথিবী ছাড়িয়ে পাড়ি জমিয়েছে অন্তরিক্ষে। নাসা ল্যাবরেটরিতে মঙ্গল অভিযানের বাহন নিয়ে কাজ চলছে। এই কাজ ইন্টারনেট ছাড়া সম্ভব নয়।
সবার জন্য ইন্টারনেট- তত দিন পর্যন্ত সম্ভব নয়, যত দিন না আমরা ইন্টারনেট ব্যবহারের খরচ কমাতে পারব। কারণ ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে খরচ একটা অনেক বড় বাধা। সে জন্য আমাদের সবাইকে একসঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করতে হবে ইন্টারনেটের খরচ কমিয়ে আনার জন্য।
সবার জন্য ইন্টারনেট- এটা শুধু তখনই সম্ভব যখন সব দেশের সরকার এই ইন্টারনেটের ব্যবহারের ওপর থেকে সব ধরনের আইনি বাধা তুলে নেবে। ইন্টারনেট হবে নিরবচ্ছিন্ন ও বাধামুক্ত। মানুষ হিসেবে আমাদের সবার কথা বলার ও কথা শোনার পূর্ণ স্বাধীনতা থাকতে হবে।
সবার জন্য ইন্টারনেট- সম্ভব হবে না যদি আমরা এর ক্রমবর্ধমান চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে না উঠতে পারি। এ জন্য ইন্টারনেট সেবাদাতাদের আরও সচেতন হতে হবে দ্রুত কারিগরি উন্নয়নের জন্য। এ জন্য ইন্টারনেট আর্কিটেকচার বোর্ড, ইন্টারনেট ইঞ্জিনিয়ারিং স্টিয়ারিং গ্রুপ, ইন্টারনেট রিসার্চ টাস্কফোর্স এবং ইন্টারনেট ইঞ্জিনিয়ারিং টাস্কফোর্সকে আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করতে হবে সবাইকে।
সবার জন্য ইন্টারনেট- বাস্তব রূপ পাবে না যতক্ষণ না সারা বিশ্বের মানুষের ঘরে ঘরে, সব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে, প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা পৌঁছবে। আমি স্বপ্ন দেখি, এমন একটা দিন আসবে যেদিন কোনো বাধা ছাড়াই যেকোনো সময়, যে কেউ, পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে, যেকোনো ভাষায় ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবে।
সবার জন্য ইন্টারনেট- এই প্রয়াস ব্যর্থ হবে যদি না ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা নিজেদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন না হয়। ইন্টারনেটে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষার বিষয়টা সবাইকে জানতে হবে। নিরাপদ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ইন্টারনেটের ব্যবহার এবং ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষা করতে হবে। প্রযুক্তিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে যেন প্রযুক্তির মাধ্যমেই ইন্টারনেটের ব্যবহার নিরাপদ ও ঝঞ্ঝাটমুক্ত করা যায়। ইন্টারনেটকে এই স্থানে নিয়ে যেতে আমাদের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
সবার জন্য ইন্টারনেট- তখন পর্যন্ত সম্ভব নয় যতক্ষণ পর্যন্ত না অভিভাবক ও শিক্ষকেরা নিজেরা যথেষ্ট সচেতন হচ্ছেন এর যাবতীয় ব্যবহার সম্পর্কে। অভিভাবক ও শিক্ষকদের জানতে হবে ইন্টারনেটের সীমাহীন বিশাল জগতের সব কিছুই কিন্তু শিশুদের জন্য নিরাপদ নয়। এমন অনেক কিছুই থাকতে পারে ইন্টারনেটে যা কিনা শিশুর জন্য মোটেই উপযোগী নয়। শিশুদের অনুপযোগী বিষয়গুলো যেন শিশুরা ব্যবহার না করে সে ব্যাপারে সবাইকে সচেষ্ট থাকতে হবে। শিশুদের জন্য যেকোনো ধরনের শঙ্কামুক্ত, নিরাপদ ইন্টারনেট জগৎ গড়ে তোলার দায়িত্ব আমাদের সবার।
সবার জন্য ইন্টারনেট- বাস্তব করতে হলে আমাদের আরও অনেক বেশি দায়িত্বশীল হতে হবে। ইন্টারনেটকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সম্পদের মতো করে চিন্তা করতে হবে। আমরা যেমন নিজের সম্পদ রক্ষায় সচেষ্ট থাকি, ঠিক তেমনটিই করতে হবে ইন্টারনেটের ক্ষেত্রেও। এমন কিছু মানুষ আছে যারা ইন্টারনেটের অপব্যবহার করতে চেষ্টা করে সব সময়। তারা ইন্টারনেট অপব্যবহার করে আমাদের বিভিন্নভাবে বিপদে ফেলার চেষ্টা করে। তাদের বিরুদ্ধে আমাদের একজোট হতে হবে। আমাদের এমন একটা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে যেন আমরা সে সব দুষ্কৃতকারীদের সহজেই শাস্তির আওতায় আনতে পারি।
আমি আশা করি সারা দুনিয়ার সব ইন্টারনেট ব্যবহারকারীই বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট ছড়িয়ে দেওয়ার মিশনে ইন্টারনেট সোসাইটি এবং এ ধরনের অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে যোগ দেবেন। নতুন দিনের আমাদের সব কাজের বাহন হবে ইন্টারনেট। এর চেয়ে দারুণ আর কী হতে পারে বলুন!
তবে মনে রাখবেন, সবার জন্য ইন্টারনেট— তত দিন পর্যন্ত সম্ভব হবে না, যত দিন না আমরা নিজেরা এটাকে সম্ভব করব।
সূত্র: ওয়েবসাইট, ইংরেজি থেকে সংক্ষেপিত