উৎপল দাস মিলু ॥ উন্নয়ন বঞ্চিত ও আবহেলীত বরিশাল জেলার ১০ উপজেলার ৬০ গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয় না থাকায় কোমলমতি শিশুরা প্রাথমিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়ে অন্ধকারে থেকে যাচ্ছে। ফলে জেলার ঐসকল গ্রাম যুগ যুগ ধরে থেকে যাচ্ছে উন্নয়ন বঞ্চিত। তাছাড়া পড়াশোনার সুযোগ না থাকায় ঐ সকল গ্রামের মানুষের ভাগ্য বদলায় না।বরিশাল জেলায় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে মাত্র ৯ শ’ ৫১ টি।
১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের মানুষের দোড় গোড়ায় প্রাথমিক শিক্ষার সুযোগ পৌছে দিতে প্রতিটি গ্রামে একটি করে প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহন করেন। পর্যায়ক্রমে তা বাস্তবায়িত হলেও বাদ পরে যায় বরিশাল জেলার ৬০ টি গ্রাম। তারপর সরকার পরিবর্তন হয়েছে সরকার এসেছে কেউ ঐ অবহেলিত গ্রামগুলোর কোমলমতি শিশুদের কথা ভাবেনি। ঐ সকল গ্রামের শিশুরা বরাবরই থেকে গেছে শিক্ষার সুযোগ বঞ্চিত। বর্তমান সরকার বঙ্গবন্ধুর সেই সপ্ন বাস্তবায়নের জন্য ফের নতুন করে অবহেলীত গ্রামে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহন করেছে। তারই ধারা বাহিকতায় প্রাথমিক বিদ্যালয় শুন্য গ্রামের তালিকা চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রনালয় । সম্প্রতি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ঐ তালিকা তৈরি করে তা ঢাকায় প্রেরন করেছে।ঐ তালিকা অনুযায়ী বরিশাল জেলার ১০ উপজেলার ৬০ টি গ্রমে কোন প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই। তার মধ্যে বরিশাল জেলার খোদ সিটি কর্পোরেশন এলাকার ২৪ নং ওয়ার্ডের রুপাতলীর ধানগবেষনা রোড বা জিয়ানগর, সদর উপজেলার ১০ ইউনিয়নের ৪ টি গ্রামের মধ্যে চর সিংহের কাঠী, ইছাগুড়া, বামনি কাঠী, ডেফুলিয়া।জেলার সবচেয়ে বঞ্চিত হিজলা উপজেলা। এ উপজেলার ১৪ টি গ্রামেই নেই প্রাথমিক বিদ্যালয়। এর মধ্যে খাগের চর , চরজান পুর, বড় লক্ষিপুর, টুম লক্ষিপুর, আশুলি আবুপুর, শংকরপাশা, খৈইলা, চর মান্দ্রা, ছোট লক্ষিপুর, ঘোষেরচর, আবদা, চর হিজলা ও কাউরিয়া।
মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার ৯ টি গ্রামে নেই প্রাথমিক বিদ্যালয়। গ্রামগুলো হচ্ছে ,দক্ষিন আজিমপুর, গাগরিয়া, চরকেউটিয়া, বাহাদুরপুর, ছৈলা, চুনার চর, পূবৃপাড় ও কোলচর।
মুলাদী উপজেলার ৯ টি গ্রামে নেই প্রাথমিক বিদ্যালয়। গ্রামগুলো হচ্ছে, পশ্চিম নাজিরপুর, পূর্ব হোসনাবাদ, চর মাধব রায়, মাছুয়খালী, পশ্চিম চরপত্তনি ভংগা, চর ধলেশ্বর, চর কলোনিয়া, পশ্চিম বরইয়া ও পশ্চিম ডিক্রীর চর।
বাবুগঞ্জের ৯ টি গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই। তার মধ্যে শ্রীমন্ত রায়, চরমহিষাদি, নতুনচর ডাকাতিয়া, রবীন্দ্র নগর, বরিপাশা, গোয়ালদি মুশুরিয়া, ফুলতলা , মেঘিয়া ও রাহুত কাঠী।
উজিরপুরের ১৩ টি গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই। গ্রামগুলো হচ্ছে, উত্তর বাহেরহাট, উত্তর সাতলা, বারোপাইকা, উত্তর জল¬া, ইন্দুরকানী, ভাউধর, কাউয়ারেখা,পূর্ব ধামুরা, পশ্চিম ধামুরা, চাউলাহার, দক্ষিন মোড়াকাঠী ও পশ্চিম কারফা।
আগৈলঝাড়া উপজেলার মাত্র ২ টি গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই। গ্রাম দুটি হল সোমাইর পাড় ও বাক পাড়া।
জেলায় ভালো অবস্থানে রয়েছে ৩ টি উপজেলা এর মধ্যে বাকেরগঞ্জ, গৌরনদী ও বানারীপাড়া উপজেলার প্রতিটি গ্রামে একটি করে গ্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে । এ তিনটি উপজেলার কোনগ্রামই অবহেলিত নেই প্রাথমিক শিক্ষার দিক থেকে।
শিক্ষক নেতা অধ্যাপক মহসিন উল ইসলাম হাবুল বলেন, থাকলে খেলার মাঠ থাকতো। শিশুরা শিক্ষার পাশাপাশি খেলাধুলার সুযোগ পেত। গ্রাম এলাকার লোকজন মাদ্রাসায় ধান-চাল দিয়ে তাদের ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনা করায়। পরকালে ছোয়াবের আশায় মাদ্রাসায় দান খয়রাত করে। কিন্তু স্কুলে কিছুই দেয় না। স্কুলের সমস্যা সমাধানে সরকার কিংবা বেসরকারী উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসা উচিত বলে মনে করেন তারা।
এ বিষয়ে আলাপকালে বরিশালের প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এস.এম.ফারুক বলেন, বঞ্চিত ঐ সকল গ্রামের মানুষ ৪০ বছর ধরে প্রাথমিক শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত। এই ৪০ বছরে ৬০ গ্রাম থেকে হাজার হাজার শিশু শিক্ষা সুযোগ পেয়ে শিক্ষিত হয়ে দেশের সেবায় আত্মনিয়োগ করতে পাতো। সেটা আর হয়ে ওঠেনি। এবার বর্তমান সরকার ঐ গ্রামগুলোতে প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করলে কোমলমতি শিশুরা শিক্ষা গ্রহন করে দেশ সেবায় আত্মনিয়োগ করার সূযোগ পাবে। গড়ে উঠবে উন্নত ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠি। আর এতে করে উন্নয়নশীল গ্রামে রুপ নেবে এই গ্রামগুলো।
(Source: The Daily Shanama) (Link: http://shahnamabd.com/view.php?p_id=27214)
|