ভালোবাসা দিবসের প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত ঝিনাইদহের ফুলকন্যারা Feb 13, 2013
টিপু সুলতান, কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ):
রাত পোহালেই ১৪ ফেব্রুয়ারি, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। তাইতো ভালোবাসা প্রকাশের প্রতীক মহামূল্যবান ফুলটি অগণিত তরুণ-তরুণীসহ সব বয়সের মানুষের হাতে তুলে দিতে ব্যাস্ত সময় পার করছে ঝিনাইদহের ফুলকন্যারা। প্রতি বছর বাংলা ও ইংরেজি নববর্ষ, স্বাধীনতা দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও ভালোবাসা দিবসের মতো দিনগুলোতে ফুলের অতিরিক্ত চাহিদা থাকে। আর এ চাহিদার সিংহভাগ জোগান দিয়ে থাকে এই এলাকার ফুল চাষীরা।
ঝিনাইদহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় মাঠের পর মাঠে চাষ করা হয়েছে গাঁদা, রজনীগন্ধ্যা, গোলাপ ও গ্লাডিয়াসসহ নানা জাতের ফুল। এসব ফুল ক্ষেত থেকে সংগ্রহ ও মালা গাঁথা থেকে শুরু করে বিক্রি করা পর্যন্ত এই এলাকার মেয়েরা ফুল চাষ করে থাকে। এতে পুরুষের পাশাপাশি মেয়েদেরও কর্মসংস্থান হচ্ছে। এলাকার উত্পাদিত ফুল প্রতিদিন দূরপাল্লার পরিবহনে ভরে চলে যাচ্ছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের বড় বড় শহরে। জাতীয় ও বিশেষ দিনগুলো ছাড়া সারাবছর এ অঞ্চলের উত্পাদিত ফুল সারাদেশের চাহিদা মেটাতে ভূমিকা রাখে। কালীগঞ্জ উপজেলার ফুলনগরীখ্যাত বালিয়াডাঙ্গার ফুলকন্যা আয়েশা বেগম ও জরিনা খাতুন জানায়, বছরের বারো মাসই ফুল তোলার কাজ করি। কিন্তু বিশেষ বিশেষ দিন সামনে রেখে কাজ বেশি করতে হয়। আয়-উপার্জনও বেশি হয়। তারা আরও জানায়, এখন ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে সকাল-বিকাল কাজ করতে হচ্ছে। ব্যাপারীরা ফুল নিতে ফুল মালিকের বাড়ি বসে থাকছে। এ কারণে সব কিছু রেখে সারাদিন ফুল তুলছি। তারা জানায়, প্রতি ঝোপা ফুল তুলে গেঁথে দিলে ফুলমালিক ১০ টাকা করে দেন। প্রতিদিন তারা ১২ থেকে ১৮ ঝোপা ফুল তুলতে পারে।
ঝিনাইদহ ও কালীগঞ্জ কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলায় প্রায় ৩০০ হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়েছে গ্লাডিয়াস, রজনীগন্ধা গোলাপ, গাঁদাসহ নানা জাতের ফুল। উত্পাদন ব্যয় কম, আবার লাভ বেশি হওয়ায় কৃষক ফুল চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। জেলার গান্না, বালিয়াডাঙ্গা, তিল্লা, সিমলা, রোকনপুর, গোবরডাঙ্গা, পাতবিলা, পাইকপাড়া, তেলকূপ, গুটিয়ানী, কামালহাট, বিনোদপুর, দৌলতপুর, রাড়িপাড়া, মঙ্গলপৈতা, মনোহরপুর, সাইটবাড়িয়া, বেথুলী, রাখালগাছি, রঘুনাথপুরসহ জেলার বিভিন্ন গ্রামের মাঠে ফুল চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি গাঁদা ফুল চাষ হয় কালীগঞ্জে বালিয়াডাঙ্গা এলাকায়। এ কারণে সবাই এখন এ এলাকাকে ফুলনগরী বলেই চেনে। দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখলেও দ্রুত পচনশীল এ ফসল সংরক্ষণের জন্য নেই কোনো হিমাগার। এতে যখন বাজারে জোগান বৃদ্ধির কারণে হঠাত্ দাম কমে যায়, তখন লোকসানে বিক্রি করা ছাড়া উপায় থাকে না ফুল চাষীদের। আর এতে কৃষক বঞ্চিত হন ন্যায্যমূল্য থেকে।
বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের ফুল চাষী সাবে ইউপি চেয়ারম্যান আবদুর রাজ্জাক জানান, ১৯৯১ সালে এ এলাকায় সর্বপ্রথম ফুল চাষ করেন বালিয়াডাঙ্গার ছবদুল শেখ। তিনি ওই বছর মাত্র ১৭ শতক জমিতে ফুল চাষ করে স্থানীয় বিয়ে, সামাজিক অনুষ্ঠান ও জাতীয় দিবসগুলোতে ক্ষেত থেকেই বিক্রি করে প্রায় ৩৪ হাজার টাকা লাভ করেছিলেন। এরপর থেকে এ চাষ বিস্তার লাভ করতে থাকে। ধান, পাট, সবজি প্রভৃতি ফসলের চাষ করে উত্পাদন ব্যয় বাদ দিলে খুব বেশি একটা লাভ থাকে না। কিন্তু ফুল চাষ করলে আবহাওয়া যদি অনুকূলে থাকে, তাহলে যাবতীয় খরচ বাদে প্রতি বিঘায় ৪০ থেকে ৬০ হাজার টাকা লাভ করা সম্ভব। এতে দিন যত যাচ্ছে, এ অঞ্চলে বৃদ্ধি পাচ্ছে ফুল চাষ।
বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের ফুলকন্যা সরস্বতী জানায়, আমরা বাড়ির সব কাজ শেষ করে মাঠে ফুল তুলতে যায়। ফুল তুলে বাড়িতে নিয়ে আসার পর ঝোপা তৈরি করি। এক ঝোপায় ১ হাজার গাধা ফুল থাকে। এক ঝোপা ফুল গেঁথে দিলে মালিক আমাদের ১০ টাকা দেয়। সারাদিনে আমরা ১০ থেকে ১৫টি ঝোপা তৈরি করি। সে আরও জানায়, এ বছর স্থানীয় একটি এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে একটি গরু কিনেছে সে।
(Source: Amar Desh) (Link:http://www.amardeshonline.com/pages/details/2013/02/13/187650#.URsqsfLnGqA)