সাদুল্যাপুর (গাইবান্ধা) সংবাদদাতা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে জয়ী হলেও জীবনযুদ্ধে অনেক মুক্তিযোদ্ধা হেরে গেছেন। তেমনি ৩ জন মুক্তিযোদ্ধা হলেন গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর উপজেলার মফিউজ্জামান, সোনাতন ও আবু তালেব। তারা ৩ জনই জীবনযুদ্ধে পরাজিত। মুক্তিযোদ্ধা মো. মফিউজ্জামান (৫৬)। তিনি সাদুল্যাপুর উপজেলার পুরান লক্ষ্মীপুর গ্রামের মৃত রোস্তম আলীর ছেলে। ১৯৫২ সালের ১২ আগস্ট তার জন্ম। মফিউজ্জামান '৭১-এ মুক্তিযুদ্ধে ১১নং সেক্টরের অধীনে দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখযুদ্ধ করেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মুক্তিযোদ্ধা মফিউজ্জামান দু'বেলা দু'মুঠো খাবার জোগাতে রিকশা চালনাকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। উপার্জিত আয়ে অনাহার-অর্ধাহারে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করেছেন। এক সময় অর্থাভাবে বিনা চিকিৎসায় তার স্ত্রী জহুরা বেগম মারা যান। তিনি অমানিশার অন্ধকারে ৩ সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে হৃতবিহ্বল হয়ে পড়েন। জীবনের প্রয়োজনে আবারো বিয়ে করেন। বর্তমানে তিনি দ্বিতীয় স্ত্রী ফরিদা বেগম, ১ ছেলে বরাদুল ইসলাম (৭) ও ১ মেয়ে স্বপ্না খাতুনকে (২) নিয়ে মন্দুয়ার গুচ্ছগ্রামে বসবাস করছেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা মফিউজ্জামান জানান, জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছেন। আজ দুবেলা খাবার জোটাতে পারেন না। সোনাতন মহন্ত (৬২)। তিনি সাদুল্যাপুর উপজেলার জামুডাঙ্গা গ্রামের মৃত তরনীকান্ত মহন্তের ছেলে। ১৯ বছর বয়সে অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে যুদ্ধ করে বাংলার মটিতে বিজয়ের পতাকা উত্তোলন করেন। তিনি জীবনযুদ্ধে পরাজিত সৈনিক। তিনি ২০০৭ সাল পর্যন্ত রিকশা-ভ্যান চালিয়ে সংসার নির্বাহ করেন। বর্তমানে শারীরিক অবস্থা খারাপ। রিকশা চালনার পরিবর্তে জীবিকা নির্বাহের জন্য ৫ বছর ধরে পান বিক্রি করছেন। প্রতিদিনে যে টাকা আয় হয় তা দিয়েই কোনো রকমে ৪ সদস্যের সংসার চলছে। অভাব-অনটনের মধ্যেও ২ সন্তানের ভরণ-পোষণ ও ২ মেয়েকে বিয়ে দেন। এরমধ্যে ছোট ছেলে রতন মহন্ত নবম শ্রেণীতে অধ্যয়নরত। তার লেখাপড়ার খরচও চালাতে হচ্ছে। সোনাতন মহন্ত জানান, পৈতৃক সম্পতি ৮ শতক জায়গায় তিন ভাইসহ বসবাস করেন। সামান্য ভাতা দিয়ে সংসার চলে না। আক্ষেপ করে জানান, যে আশা নিয়ে দেশ স্বাধীন করেছেন, বাঙালি জাতির সে আশা আজো পূরণ হয়নি। জীবনের শেষ বয়সে আজ তিনি ক্লান্ত। মুক্তিযোদ্ধা আবু তালেব (৬৭)। সংসার পরিচালনার জন্য জীবনের শেষ বয়সে গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হাড়ি-পাতিল ঝালাই করছেন। সারাদিন ঘুরে ঘুরে যা আয় হয় তা দিয়ে কোনো মতে সংসার চালাতে হয়। দুরারোগ্য ব্যাধি রোগ তার শরীরের বাসা বেঁধেছে। হাতে টাকা না থাকায় উন্নত চিকিৎসা নিতে পারছেন না। আবু তালেব উপজেলার বড় দাউদপুর গ্রামের বাসিন্দা। ১৯৭১ সালে তার বয়স ছিল ২৬ বছর। তিনি অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধার মতো দেশমাতৃকার জন্য যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। ভারতের কাকড়ি পাড়ায় গিয়ে প্রথমে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। দেশের বিভিন্ন স্থানে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। সংসার জীবনে তার স্ত্রী, ১ ছেলে ও ১ মেয়ে রয়েছে। মেয়ে বিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু বেশি দিন সংসার টেকেনি। বাধ্য হয়ে বাবার বাড়ি ফিরে আসে। পরে কন্যা সন্তানকে রেখে ঢাকার একটি গামেন্র্টে চাকরি নেন। ছেলে মিস্ত্রি কাজ করেন। তাকে প্রতিদিন ৩ জনের খাবার জোগাড় করতে হয়। মুক্তিযোদ্ধা ভাতার ২ হাজার টাকা তিনমাস পর পর পান। ওই টাকা দিয়ে সংসারের দুরবস্থা কাটে না। কয়েকবার বিজয় দিবসে লুঙ্গি আর শাড়ি জুটেছিল। এছাড়া আর কোনো সাহায্য সহযোগিতা পাননি তিনি।
(Source: Daily JayJay Din)(Link:http://www.jjdin.com/?view=details&archiev=yes&arch_date=22-12-2012&type=single&pub_no=335&cat_id=1&menu_id=16&news_type_id=1&index=3)
|