পূর্ণ উৎপাদনশীল অর্ধশতাধিক লবণ কারখানা অধ্যূষিত দেশের বৃহত্তম ও একমাত্র লবণ শিল্প এলাকা কক্সবাজার সদরের ইসলামপুর শিল্প এলাকায় কাঁচামাল সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। অপরিশোধিত লবণের অভাবে অত্র শিল্প এলাকার বেশির ভাগ কারখানা ইতিমধ্যেই বন্ধ হয়ে গেছে। অবশিষ্ট গুলোও সপ্তাহ দু’এক এর মধ্যে বন্ধ হওয়ার আশংকা রয়েছে। ফলে জীবিকা হারিয়ে প্রায় ১০ হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে। বিগত লবণ মৌসুমে আবহাওয়াগত প্রতিকুলতার কারণে দেশে কাংখিত পরিমাণ লবণ উৎপাদন হয়নি। যার কারণে অন্যান্য বছরের তুলনায় চলতি বছর বর্ষা মৌসুমে ফ্যাক্টরী চালানোর মত পর্যপ্ত লবণ গুদামজাত করা সম্ভব হয়নি। যৎসামান্য ষ্টক যা ছিল তা দিয়ে এতদিন চললেও এ পর্যায়ে এসে উৎপাদন বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন মিল মালিকরা। দেশের একমাত্র লবণ উৎপাদনকারী জেলা হিসাবে কক্সবাজারে উৎপাদিত লবণ দিয়েই সারা দেশের লবণের চাহিদা মেটানো হয় এবং কক্সবাজার জেলার উৎপাদিত লবণ প্রক্রিয়াজাত ও পরিশোধনের জন্য সদরের ইসলামপুরে অর্ধ শতাধিক লবণ ফ্যাক্টরী স্থাপিত হয়। চলতি বছর কাঁচা লবণের সংকটের কারণে এ সব কারখানায় উৎপাদন অব্যাহত রাখা সম্ভব হচ্ছেনা। মাঠ পর্যায়েও কোন প্রকার লবণ জমা নেই বলে জানিয়েছেন লবণ চাষীরা। প্রতিবছর নভেম্বর ডিসেম্বর থেকে মে-জুন পর্যন্ত লবণ উৎপাদন মৌসুম হলেও বিগত মৌসুমে ক্রমাগত বৃষ্টিপাতের কারণে লক্ষ্যমাত্রার এক চতুর্থাংশ ও উৎপাদন হয়নি। ফলে প্রচন্ড কাঁচামাল সংকটে পতিত হয় অত্র এলাকার লবণ মিল সমুহ। কিন্তু ঢাকা-নারায়নগঞ্জ-চাঁদপুর-ঝালকাঠি-খুলনা কেন্দ্রিক লবণ মিল মালিকরা সিন্ডিকেট করে ভারত থেকে লবণ আমদানি করে তাদের কারখানা চালু রেখেছে। কিন্তু কক্সবাজারের লবণ মিল সমূহ দুরত্বজনিত কারণে পরিবহন খরচ বেশি পড়ায় ভারত থেকে আমদানি করা লবণ দিয়ে উৎপাদন করে পোষাতে পারতেছেনা। তাই এক প্রকার বাধ্য হয়ে কারখানা বন্ধ রাখতে হচ্ছে ও প্রায় ১০হাজার অভিজ্ঞ কারখানা শ্রমিক বর্তমানে সম্পূর্ণ বেকার হয়ে পড়েছে। সদ্যসমাপ্ত ঈদে এসব শ্রমিক পরিবার ঈদ আনন্দ দুরের কথা, ঈদের সেমাই চিনি কিনার টাকা জোগাড় করতে পারেনি। একাধিক মিল মালিক জানিয়েছেন বিভিন্ন ব্যাংক ও অর্থ লগ্নীকারক প্রতিষ্ঠান থেকে ইতিপূর্বে নেয়া ঋণ দিন দিন চক্রবৃদ্ধিহারে বাড়লেও মিলে উৎপাদন না থাকায় তারা নিরুপায় হয়ে পড়েছেন। উত্তর বঙ্গ সহ সারা দেশে ক্রেতাদের কাছে পরিশোধিত লবণ সরবারহ অব্যাহত না পারলে ক্রেতারা থেকে ধীরে ধীরে ইসলামপুর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে নারায়নগঞ্জ-খুলনা-ঝালকাঠি এলাকার লবণ মিল থেকে সরবরাহ নিলে ইসলামপুরের মিল সমূহ বাজার হারিয়ে ফেলার আশংকা রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কারখানা মালিক জানান যে, পার্শ্ববর্তী দেশ মায়নমার থেকে লবণ আমদানি করা গেলে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব পাবেন ও ইসলামপুরের ফ্যাক্টারী সমূহে উৎপাদন অব্যাহত রাখা সম্ভব হবে।
|