বাল্যবিবাহ শুধু অভিশাপ নয়, নিয়ে আসে ভয়ংকর বিপর্যয়, এই জন্য দায়ী যেমন মা-বাবা তেমনি দায়ী কাজিরা । আমাদের দেশে বাল্যবিবাহের হার দিন দিন বেড়েই চলছে। তাই বিয়ের আগে কনেদের জন্মসনদ যাচাই করার নির্দেশ রয়েছে হাইকোর্টের। আর এই সনদ যাচাই করবেন কাজিরা। বাল্যবিবাহ নিরসনের জন্যই হাইকোর্ট এই নির্দেশনা দিয়েছেন। তার পরও থেমে নেই বাল্যবিবাহ।কারণ কিছু আসাধু কাজি টাকার লোভে বিসর্জন দিচ্ছে তাদের বিবেক আর বাল্যবিবাহ অপরাধ জেনও নিরবে বেআইনি কাজকে আইনি কাজে রপান্তর করছে। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের নিকাহ্ নিবন্ধক মো. আবুল হোসেনের দায়েরকৃত কাজির নিবন্ধন বাতিল সংক্রান্ত রিটের শুনানির পর এই রায় দেওয়া হয়। কাজি মো. আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে ২০০৯ সালে মিথ্যা তথ্য দিয়ে অপ্রাপ্তবয়স্ক দুজন মেয়ের বিয়ে নিবন্ধনের অভিযোগ ওঠে। আইন মন্ত্রণালয় ঘটনার তদন্ত করে দেখে যে, কাজি ১৩ ও ১৫ বছরের দুজন কন্যাশিশুকে সাবালক দেখিয়ে বিয়ে নিবন্ধন করেছেন। অপ্রাপ্তবয়স্কদের বিয়ে নিবন্ধনের অভিযোগে ১৮ মে ২০১০ তাঁর নিবন্ধন বাতিল করে দেয় আইন মন্ত্রণালয়। এই বিষয়টিকে চ্যালেঞ্জ করে কাজি আবুল হোসেন একই বছরের ৭ জুন হাইকোর্টে একটি রিট করেন। শুনানি শেষে আদালত নিবন্ধন বাতিল করাকে বৈধ ঘোষণা করেন এবং পর্যবেক্ষণ করে বলেন যে, আইন অনুযায়ী ১৮ বছর বয়সের আগে কোনো নারীর বিয়ে দেওয়া দণ্ডনীয় অপরাধ। তাই বাল্যবিবাহ রোধে এবং কোনো মেয়ে বিয়েযোগ্য কি-না নিশ্চিত হওয়ার জন্য জন্মসনদ যাচাই করতে হবে।
বাল্যবিবাহ নিরোধে দেশীয় আইন ও ইসলামিক বিধান:
বাংলাদেশে বাল্যবিবাহ নিষিদ্ধ করা হয় ১৯২৯ সালে বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, ১৯২৯-এর মাধ্যমে, শুরুতে বিয়ে করার জন্য কনের সর্বনিম্ন বয়স ১৪ এবং বরের সর্বনিম্ন বয়স ১৮ নির্ধারণ করা হলেও ১৯৮৪ সালে সংশোধনের মাধ্যমে বরের ক্ষেত্রে ২১ এবং কনের ক্ষেত্রে ১৮ করা হয়। আইনান পাসের ৮১ বছর এবং সংশোধনের ২৬ বছর পর বাল্যবিবাহ এখনো নিত্যদিনের ঘটনা।
In Islam, Woman has the right to accept or reject marriage proposals. Her consent is a prerequisite to the validity of the marital contract, according to the Prophet’s teaching. It follows that if an "arranged marriage" means the marrying of a female without her consent, then such a marriage may be annulled if the female so wishes:
Ibn Abbas reported that a girl came to the Messenger of Allah, and she reported that her father had forced her to marry without her consent. The Messenger of God gave her the choice...(between accepting the marriage or invalidating it)(Ahmad, Hadith no. 2469).
Another version of the report states that “the girl said: ‘Actually, I accept this marriage, but I wanted to let women know that parents have no right to force a husband on them'''(Ibn-Majah)
The Muslim scholar, Dr. Bilal Philips had to say the following about Child marriage in a recent interview:
"The concept of child marriage, of course in Islam, if a person classified as a child is married, when they reached the age of puberty and maturity, then they have a right to choose whether to go on with that marriage or not. So it becomes a marriage on paper. You know, they take place on paper on agreements with families; it is not going to be done again between individuals where the possibility of exploitation is, you know, more prevalent; but once the person reaches of age, it could be between two young people or could be a younger person and an older person, you know, either way male-female, female-male and when they reach that age of puberty then the decision is theirs. I know there has been something in the newspaper quite recently also, you know, concerning there is a girl in some place in the States who is about 13 years old got married, you know; it was a big thing to do that , particularly in the States; that State doesn't have clear laws prohibiting it. So there was a big uproar about it, you know. But it had been going on for quiet a long time … in the previous century the nineteenth, eighteenth … this is something not uncommon. The desire to want to protect young people is a genuine desire; but where, you know, families are involved, people are not being forced etc, then this is not something which Should be looked at in the negative light''
Al-Azhar Al-Sharif, the highest religious body in the Sunni world, has recently released a new manual on the rights of Muslim children where it said: "Marriage in Islam is regulated by certain rules, namely, children must reach puberty and maturity so that they can get married," ..
বাল্যবিবাহের শাস্তিঃ
১৯২৯ সালের বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন পাস করে বাল্যবিবাহকে একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। অর্থাৎ ২১ বছরের কম বয়সের ছেলে এবং ১৮ বছরের কম বয়সের মেয়ের মধ্যে বিয়ে হলেই তা আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ১৯২৯ সালের বাল্যবিবাহ আইনের ৫ ধারা অনুসারে এ শাস্তি এক মাস পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা এক হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা উভয় হতে পারে। প্রথমত. ২১ বছরের বেশি বয়সের কোনো ছেলে বা ১৮ বছরের বেশি বয়সের কোনো মেয়ে অর্থাৎ প্রাপ্তবয়স্ক কোনো ব্যক্তি যদি কোনো নাবালক বা শিশুকে বিয়ে করেন, তার এক মাস পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা এক হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা দুটিই হতে পারে। নাবালক মেয়ে বা নাবালক ছেলের কোনো শাস্তি হবে না। তবে শর্ত থাকে যে, এই আইনে কোনো মহিলাকে কারাদণ্ড দেওয়া যাবে না, জরিমানা করা যেতে পারে। দ্বিতীয়ত. কোনো ব্যক্তি নাবালকের বিয়ে সম্পন্ন করলে, পরিচালনা করলে বা বিয়ে অনুষ্ঠানের নির্দেশ দিলে এবং নাবালকের অভিভাবক বা পিতা-মাতা ওই বিয়ে সম্পন্ন করার নির্দেশ দিলে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা এক হাজার টাকা জরিমানা বা দুটিই হতে পারে। অর্থাৎ নাবালকের আইনসংগত অভিভাবক, পিতা-মাতা, কাজি বা পুরোহিত এবং উভয় পক্ষের যারা বিয়ে অনুষ্ঠান সম্পন্ন বা পরিচালনায় সক্রিয়ভাবে নিয়োজিত ছিলেন এবং যেকোনো এক পক্ষ যে নাবালক তা জানতেন, তারা সবাই শাস্তি পাবেন অর্থাৎ এই আইনানুযায়ী বাল্যবিবাহ সম্পন্নকারি কাজিরাও দায়ী ।সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, প্রমাণের জন্য উপস্থাপিত দলিলেও অনেক সময় মেয়ের বয়স বাড়িয়ে আনা হয়।
দেখা যায়, একই মেয়ের ক্ষেত্রে চেয়ারম্যান বা কমিশনারের দেওয়া সনদে সকালে বয়স কম থাকলেও বিকেলে আবার নতুন সনদে বয়স বাড়িয়ে আনা হচ্ছে। বাল্যবিবাহ মেয়ে পক্ষের অভিভাবকেরই ভূমিকা বেশি থাকে এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বাল্যবিবাহের শিকার হয় মেয়েরা। এর ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্তও হয় মেয়েরাই। কিশোরী মাতৃমৃত্যুর বড় কারণ বাল্যবিবাহ। দেশে এক লাখ শিশু জন্ম দিতে গিয়ে ৩২০ জন মায়ের মৃত্যু ঘটে। কিশোরী মায়ের মৃত্যুঝুঁকি প্রাপ্তবয়স্ক মায়ের তুলনায় অন্তত চারগুণ বেশি। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্যানুযায়ী দেশের জনসংখ্যার ২৩ শতাংশের বয়স ১৯ বছরের নিচে। ১৬ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই গ্রামের ৮৫ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয়ে যায় ।বাল্যবিবাহ শাস্তিমূলক অপরাধ হওয়ার পরও এই হার অপরিবর্তিত থাকার একটি কারণ, হয়তো মানুষ সচেতন নয়। আইন পাসের ৮১ বছর পরও এই আইনটি সম্পর্কে অনেকেই জানেন না। এ ছাড়া এতে উলি্লখিত শাস্তির পরিমাণ এত কম যে, আইনটি জানলেও গুরুত্ব দেওয়া হয় না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আইনটি সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। তবে এ ব্যাপারে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের কোনো বিকল্প নেই। আমরা আশা করি, হাইকোর্টের বর্তমান নির্দেশনাটিও বাল্যবিবাহ রোধে কিছুটা হলেও ভূমিকা রাখবে।
Mohi uddin Mohim Legal Practitioner
Judge's Court Chittagong