প্রতিনিধি, মীরসরাই (চট্টগ্রাম)
শিক্ষকদের লাগাতার ধর্মঘটে মীরসরাই বেসরকারি মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও মাদ্রাসাসহ ৭৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুদিন ধরে কোন ক্লাস হয়নি। শিক্ষার্থীরা স্কুলে এসে ফিরে গেছে। বাংলাদেশ শিক্ষক-কর্মচারী সংগ্রাম পরিষদ চাকরি জাতীয়করণসহ ১৭ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে লাগাতার ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে মীরসরাই শিক্ষক নেতারাও ধর্মঘট পালন করছে। আন্দোলনরত শিক্ষক নেতারা বলছেন, তারা বৈষম্যের শিকার। তাদের দাবির মধ্যে রয়েছে সরকারি স্কুলের শিক্ষকদের অনুরূপ ইনক্রিমেন্ট, চিকিৎসা-ভাতা, উৎসব-ভাতা ও বাড়িভাড়া বরাদ্দের ঘোষণা দিতে হবে এবং তাদের চাকরির বয়সসীমা ৬৫ বছরে উন্নীত করতে হবে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা লাগাতার ধর্মঘটে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। সরসমিনে রোববার (১৩ জানুয়ারি) দেখা গেছে, মীরসরাইয়ের সব ক'টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অচলাবস্থা।
শিক্ষার্থীরা সকালে যথানিয়মে বিদ্যালয়ে এলেও ক্লাস না হওয়ায় মাঠে বসে থেকে ও খেলাধুলা করে ফিরে গেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সপ্তাহব্যাপী ধর্মঘটের কারণে উপজেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুদিন ধরে ক্লাস বন্ধ আছে। সুুফিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রণীর ছাত্রী নাছরিন আক্তার বলেন, স্কুলে এসে শুনি ক্লাস হবে না। পরে স্যারদের জিজ্ঞেস করলে তারা ধর্মঘটের কথা বলে। তাই আবার বাড়ি ফিরে যাচ্ছি। মীরসরাই পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক হোসাইন জানান, বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের চাকরি জাতীয়করণ করার দাবিতে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় লাগাতার ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। গত শনিবার থেকে এ ধর্মঘট শুরু হয়েছে। এদিকে বছরের শুরুতেই শিক্ষকদের এই কর্মবিরতি ঘোষণায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা। অনেক অভিভাবক জানান, এ বছর শিক্ষার্থীদের পাঠ্যপুস্তক অনেক পরিবর্তন হয়েছে। ইংরেজি, অংকে পরিবর্তন এসেছে। শিক্ষার্থীরা এখন এ বিষয়ে ভালো ধারণা না পেলে পরে পরীক্ষার সময় বিপাকে পড়বে। বাংলাদেশ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি মীরসরাই উপজেলা শাখার সভাপতি অধ্যক্ষ নুরুল আবছার দুলাল বলেন, 'বাধ্য হয়ে আমাদের আন্দোলনে নামতে হয়েছে। আমরা একাধিকবার আমাদের দাবির বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেছি। কিন্তু তা মেনে নেয়া হয়নি। দাবি মানা হলে আন্দোলনের প্রয়োজন ছিল না।'এই সময়ে শিক্ষার্থীদের কিছুটা সমস্যা হবে স্বীকার করে তিনি বলেন, ??শিক্ষক-কর্মচারীরা ভালো না থাকলে শিক্ষাদানও ভালো হবে না। এ কারণে তাদের এই সাময়িক সমস্যা মেনে নিতে আমরা আহ্বান জানাই।'মীরসরাই উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইউনুস জানান, শিক্ষকদের লাগাতার ধর্মঘটের কারণে উপজেলার ৪৫টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ২৫টি মাদ্রাসা ও ৫টি কলেজে দুদিন ধরে কোন ক্লাস হয়নি। তিনি সমস্যা সমাধানে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। শিক্ষকদের বিক্ষোভ সমাবেশ : ১৭ দফা দাবিতে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দেশব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে মীরসরাই শিক্ষক-কর্মচারী সংগ্রাম পরিষদ। রোববার (১৩ জানুয়ারি) দুপুরে মীরসরাই পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি মীরসরাই উপজেলার শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নুরুল আবছারের সভাপতিত্বে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় বক্তব্য রাখেন_ বাংলাদেশ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ শিক্ষক সমিতি চট্টগ্রাম উত্তর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক উত্তম চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক রফিক উদ্দিন, সংগঠনের মীরসরাই শাখার সভাপতি প্রফেসর কামাল উদ্দিন চৌধুরী কলেজের অধ্যক্ষ নুরুল আবছার দুলাল, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন, শিক্ষক সমিতি চট্টগ্রাম উত্তর জেলা শাখার সচিব কমল ভৌমিক, নিজামপুর কলেজের অধ্যক্ষ কৃষ্ণ কুমার দত্ত, মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতি মীরসরাই উপজেলা শাখার সভাপতি নুরুল কবির, শিক্ষক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক সুভাস সরকার, শিক্ষক মো. শাহজাহান, সফিউল আলম, মীর হোসেন, রেজাউল করিম, নিজাম উদ্দিন, হোসাইন সবুজ, দিদারুল আলম, বিলকিস আক্তার প্রমুখ।
সমাবেশ শেষে শিক্ষকরা একটি বিশাল বিক্ষোভ মিছিল বের করে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ উপজেলা সদরের প্রধান সড়কসহ বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এসে শেষ হয়। বক্তারা অনতিবিলম্বে ১৭ দফা দাবি মেনে নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। সভার শুরুতেই বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি আতিয়ার রহমানের আকস্মিক মৃত্যুতে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
(Source: Sangbad) (Link:http://www.sangbad.com.bd/?view=details&type=gold&data=Recipe&pub_no=1296&menu_id=16&news_type_id=1&val=120558)
|